আগুন কি পদার্থের ৪র্থ অবস্থা? - বিজ্ঞান


আগুন কি পদার্থের ৪র্থ অবস্থা?

আমরা আমাদের চারপাশে যা দেখতে পাই, সবই পদার্থ। এটা আমরা ছোট বেলা থেকে শুনে এবং পড়ে আসছি। কিন্তু আমাদের চারপাশে আমরা যা দেখি তা অনেক সময় পদার্থ না ও হতে পারে। অবাক হওয়ার কিছু নেই। আসুন, সেই বিষয়ে জানার আগে ছোট বেলায় ফিরে যাই।

সেই বিষয়ে জানতে হলে আগে আমাদের পদার্থের সংজ্ঞা দিতে হবে, যাতে পরে কোনো সমস্যা না হয়। আমরা জানি পদার্থের তিনটি অবস্থা রয়েছে। যথাঃ কঠিন, তরল এবং বায়বীয় বা গ্যাসীয়।

আমরা এই তিনটি অবস্থার পদার্থে আমাদের আশেপাশে দেখি ও অনুভবও করি। কিন্তু আরো অনেক কিছু আছে যাকে আমরা পদার্থ বলি না। পদার্থ হতে হলে যে শর্তগুলো রয়েছে তা যদি কোনো কিছুর মধ্যে না দেখা যায়, তবে তাকে পদার্থ বলা যায় না।

শর্তগুলো হলো,

  • ভর
  • আয়তন
  • জায়গা দখল
  • চাপ প্রয়োগে বাধা প্রদান
এসব শর্তগুলো যদি কোনো কিছুর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় তবেই সেই বস্তুকে পদার্থ বলা যাবে। এখন আসি মূল কথায় যে এমন কি আছে যা পদার্থ না। আর এই প্রশ্নের উত্তর হলো আগুন। আগুন কোনো পদার্থ না। এটা আমরা জানি, কারণ এর কোনো নির্দিষ্ট ভর, আয়তন কিছুই নেই। তাহলে আগুন কি?
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ঘনীভূত তাপকে আগুন বলে। অর্থাৎ আগুন কিছুই না। অনেকের মতে আগুন হলো এক ধরনের অনুভূতি। আগুন যে আসলে কি তা একটু পরে জানছি। এখন আসুন দেখি, আগুন কিভাবে জ্বলে? 
আগুন জ্বালাতে হলে তিনটি জিনিসের গুরুত্ব অনেক। সেই তিনটি জিনিস হলো, বস্তু বা জ্বালানি (কাগজ, শুকনা পাতা ইত্যাদি), তাপ এবং বাতাস (অক্সিজেন)। এই তিনটি জিনিস ছাড়া আগুন জ্বালানো সম্ভব না। যে কোনো একটি বাদ পরলেও না। তাহলে কিছুক্ষণ আগে আমি যা বলেছিলাম যে আগুন কিছুই না তা প্রমাণ করি। যে বস্তুতে আগুন ধরানো হবে সেই বস্তুতে কোনো না কোনো শক্তি লুকায়িত আছে। এটা আমরা আইনস্টাইনের ( E = mc^2 ) এই সূত্রের মাধ্যমে নিশ্চিত হই। আর আমরা শক্তির সংরক্ষনশীলতার বিষয়টাও জানি যে, শক্তিকে কখনো সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না, এ কেবল এক অবস্থান থেকে অন্য অবস্থানে রুপান্তরিত হতে থাকে। আর এভাবেই চলতে থাকে আর এই কারণেই আমরা বিভিন্ন শক্তি দেখতে পাই। যার দ্বারা আমরা বিভিন্ন কাজ করে থাকি। এখন যে বস্তুটা রয়েছে যেটাতে আগুন ধরানো হবে তাতে একবার আগুন ধরে গেলে, বস্তুটি তার ভর হারাতে থাকবে। এবং সেই ভরই মূলত শক্তি হিসাবে বের হয়ে আসে। আর পরিবেশে তাপশক্তি ও আলো প্রদান করে। 
সুতরাং আগুনের নিজস্ব বলতে কিছুই নেই। তাহলে প্রমাণিত হলো আগুন কিছুই না। 

এবার আসুন আগুনকে পদার্থ বানানো যাক। এবার প্রমাণ করতে হবে যা আগুনও হলো পদার্থ। এখন এটা কি করে সম্ভব তা দেখা যাক।
আমরা জানি পদার্থের তিন অবস্থা। কিন্তু, মোটেও তা সত্য নয়। পদার্থে আরো অনেক অবস্থা রয়েছে যা বিশেষ মূহুর্তে প্রদর্শিত হয়। তবে এখন আমরা শুধু মাত্র পদার্থে ৪র্থ অবস্থা নিয়ে কথা বলব। পদার্থের ৪র্থ অবস্থাকে বলা হয় প্লাজমা অবস্থা। এই নামটা আমরা অনেকই শুনেছি। এখন দেখি প্লাজমা অবস্থায় কোনো পদার্থ কিভাবে রুপান্তরিত হয়।
মনে করুন একটি কঠিন অবস্থায় রয়েছে। তার ভিতরের কণাসমূহ যথেষ্ট কাছাকাছি অবস্থা রয়েছে। এখন সেই বস্থুতে তাপ প্রদাণ করলে সেই বস্তুটি তরলে পরিণত হবে এবং পদার্থের ভিতরে থাকা কণাসমূহ তুলনামূলক দুরে সরে যাবে। এবার ওই তরল পদার্থকে আরো বেশি তাপ দিলে তা গ্যাসীয় বা বায়বীয় অবস্থায় পরিণত হবে এবং তার ভিতরে থাকা কণাসমূহ আরো দূরে সরে যাবে বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এবার কি হবে যদি আমরা ঐ গ্যাসীয় পদার্থকে আরো বেশি তাপ দেই? 
ঐ পদার্থেকে আরো বেশি তাপ দিলে তা প্লাজমা অবস্থায় রূপান্তরিত হয়ে যাবে এবং সে ক্ষেত্রে ওই পদার্থে ভিতরে থাকা সকল প্রোটন ও ইলেকট্রন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। অর্থাৎ তাদের মধ্যে আর কোনো আকর্ষণবল কাজ করবে না। তারা স্বাধীনভাবে চলাচল করবে। অবশ্য এই অবস্থায় কোনো পদার্থকে রূপান্তর করতে হলে অনেক বেশি তাপের প্রয়োজন। প্লাজমার উদাহরণ আমরা দেখতে পাই, সূর্যের দ্বারা, বিদ্যুৎ চমকানোর সময়। সুতরাং বলা যায় প্লাজমা হলো আয়নিত গ্যাস যার ইলেকট্রন মুক্তভাবে এবং প্রোটন আয়নিত অবস্থায় থাকে এবং ইলেকট্রন ও প্রোটনের সংখ্যা প্রায় এক সমান থাকে। এখন যেহেতু ইলেকট্রন মুক্ত অবস্থায় থাকে তাহলে ঐ পদার্থেকে কোনোভাবে তড়িৎক্ষেত্রের ভিতরে নিয়ে আসলে সেই ইলেকট্রনগুলোর জন্য পদার্থটি প্রভাবিত হবে। অর্থাৎ সেখানে আমরা একটা ছোট পরিসরে বিদ্যুৎ দেখবো। এটা দেখতে একদম ঝড়ের রাতে বিদ্যুৎ চমকানোর মত। তার মানে কোনো পদার্থ প্লাজমা অবস্থায় থাকলে বিদ্যুতের সৃষ্টি হবে। এখন আসি আগুনের দিকে। আগুন যে কি, তা এখনো অনেক বিজ্ঞানী খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। এখন তার ভিতর থেকে একটি উদাহরণ দেখা যাক।
একটা মোমবাতিতে সাবধানে দেশলাই দিয়ে আগুন ধরান। এরপর সেই মোমবাতিকে তড়িৎক্ষেত্রে সামনে বা কাছাকাছি নিয়ে আসুন। দেখবেন আগুনের শিখাটি কিভাবে নেচে বেরাচ্ছে। সেই আগুনের শিখাটি তড়িৎক্ষেত্রের ভিতরে প্রবেশ করায়, প্রভাবিত হচ্ছে। যেটা আমরা পদার্থের ৪র্থ অবস্থা, প্লাজমা অবস্থার বিশিষ্টে লক্ষণীয়। তাহলে আগুন কি পদার্থের ৪র্থ অবস্থা প্লাজমা? তারমানে আগুনও কি পদার্থ? 
এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে অনেক ধরেনের থিওরির সাহায্য নিতে হয়। সবকিছুর ভিতরে সামঞ্জস্য দেখে তারপর ভাবতে হয়। তাই এই বিষয়ে আর বলা ঠিক হবে না। এখনই অনেক ধরনের সমস্যা সামনে এসছে, আরো বললে হয়ত আরো সমস্যা আস্মনে আসবে তখন আর এই বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারবেন না। তাই সর্বশেষে বলতে চাই আগুন খুবই সমস্যা সৃষ্টিকারী বিষয়।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন