এলিসা লামের এক অমীমাংসিত রহস্যময় মৃত্যু

এলিসা লামের এক অমীমাংসিত রহস্যময় মৃত্যু

অনাকাঙ্ক্ষিত বলতে আমরা সেই সব বিষয়গুলো বুঝি যা হঠাৎ করে ঘটে যায়, বা আমরা সহজেই এড়িয়ে যেতে চাই এমন। তেমনই একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার নাম এলিসা লাম। যা এক রহস্যময় মৃত্যুর কথা মনে করায়।

এলিসা লাম একজন চীনা কানাডিয়ান পর্যটক ছিলেন। তার বয়স আনুমানিক ২২ থেকে ২৪ এর মধ্যে হবে। সময়টা তখন ২০১৩ এর ১৯শে ফেব্রুয়ারী, তার মৃতদেহ লস অ্যাঞ্জেলেসের ডাউনটাউন নামক জায়গার সিসিল হোটেলে পাওয়া যায়। ৩১শে জানুয়ারি, লস অ্যাঞ্জেলেসের সিসিল হোটেলে তিনি অতিথি হিসাবে গিয়েছিলেন। একটা সময় পর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এলিসা লামের বাবা মা থানায় রিপোর্ট জানান যে এলিসা লাম নিখোঁজ। পুলিশ এলিসা লামকে খুঁজতে তদন্ত শুরু করে। তদন্তের স্বার্থে হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেন পুলিশ। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে বেরিয়ে আসে লোমহর্ষক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা। সিসি ক্যামেরার ফুটেজটি ছিল ২ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের।

এলিসা লাম লিফটে ঢুকে লিফটের সবগুলো বাটন একাধারে চাপতে দেখা যায়। তার কিছুক্ষণ পর এলিসা লামকে উকি দিতে দেখা যায় বাহিরের দিকে দেখে মনে হচ্ছিলো যেন কোন মানুষ এসে তার সামনে দাঁড়িয়েছে। তার কিছুক্ষণ পর এলিসা লাম লিফটে অন্যদের জায়গা দিচ্ছিল দাঁড়ানোর জন্য। এরপর তাকে কথা বলতে দেখা যায় অদৃশ্য কারো সাথে। এরপর এলিসা লাম যেন লিফট থেকে রীতিমতো চোখের সামনে গায়েব হয়ে যায়। এলিসা লাম লিফট থেকে মিলিয়ে যাওয়ার পরপরই লিফটের দরজা ৩ বার বন্ধ হয় এবং খুলে যায়। যেন কেউ লিফটে ঢুকসে আবার বের হচ্ছে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে ঐ মুহূর্তে কেউ ছিল না লিফটে যেন সব কোন অশরীর খেলা চলছে। পুলিশ এলিসা লামের এমন এলোমেলো আচরণ লক্ষ্য করে এবং সিসি টিভির ফুটেজ গনমাধ্যমে প্রকাশ করে দেয় তদন্তের স্বার্থে। এরপর ঐ হোটেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৫ সালের দিকে এলিসা লামের বাবা মা পৃথক ভাবে আরেকটি মামলা দেয় ঐ হোটেলের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেই মামলা খারিজ করে দেয় আদালত।

সিসি টিভির ফুটেজটি ভাইরাল হওয়ার পরপর ২০০২ সালের হরর মুভি ডার্ক ওয়াটারের সাথে কিছু মিল আছে বলে জানা যায়। তদন্তের জেরে তার রুমমেটরা জানায় এলিসা লামের বাইপোলার ডিসঅর্ডারের কথা। যা এলিসা লামের পরিবার সবার কাছে গোপন রেখেছিলেন। তারপর এলিসা লামের বাবা মা বলেন এলিসা লাম মানসিক ভাবে অসুস্থ থাকায় তার চিকিৎসা চলছিল এবং তাকে বেশ কিছু ঔষধও দেওয়া হয়েছিল কিন্তু সে ঔষধ সে না খেয়ে ফেলে দিতো। এলিসা লামের সাথে থাকা তাদের রুমমেটরা আরো বলেন, এলিসা লাম প্রায়ই অদ্ভুত আচরণ করতো যেমন সে সবাইকে রুম ছেড়ে চলে যেতে বলতো আবার কখনও যার যার বাড়িতে ফিরে যেতে বলতো এবং প্রায়ই সে তাদের রুমমেটদেরকে বাহির থেকে বন্ধ করে কোথায় যেন চলে যেত। পুলিশ এলিসা লামের রুম তল্লাশি করেন কিন্তু বিশেষ কোন কিছুই খুঁজে পায় না। পরবর্তীতে পুলিশ অপরাধীদের ধরার চেষ্টায় এলিসা লামের রুমসহ হোটেলের প্রত্যেকটি রুম কুকুরের মাধ্যমে তল্লাশি করিয়েছিল কিন্তু কুকুর এলিসা লামের গন্ধ কোথাও খুঁজে পায়নি।

এরপর বেশ কিছুদিন কেটে যায়। একদিন সিসিল হোটেলের অতিথিরা অভিযোগ জানায় যে তাদের সরবরাহ করা পানি কালো রঙ্গের এবং পানির স্বাদ অস্বাভাবিক। পরবর্তীতে একজন হোটেল কর্মীকে আনা হয় পানির ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করার জন্য। সিসিল হোটেলের ছাদে ৪ টি ১ হাজার গ্যালন পানির ট্যাঙ্ক ছিল যার একটিতে এলিসা লামের লাশ পাওয়া যায়। পরিচ্ছন্ন কর্মীর ভাষ্য মতে এলিসা লামকে উলঙ্গ অবস্থায় মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে দেখেছিলেন পানির ট্যাঙ্কের ভেতর। যেই পানির ট্যাঙ্কে এলিসা লামের লাশ পাওয়া গিয়েছিল সেই পানির ট্যাঙ্ক থেকে পানি সরবরাহ করা হতো মূলত একটি রান্নাঘরে, কফি শপে ও অতিথি কক্ষের রুমগুলোতে। এলিসা লামের দেহ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার পর কিছু অবাক করা বিষয় উঠে আসে। সিসিল হোটেলের ছাদের দরজা এবং সিঁড়ি সব সময় লক করা থাকতো যা পাসওয়ার্ড ছাড়া খোলা সম্ভব না। যার ফলে এলিসা লাম কোন ভাবেই ছাদে উঠতে পারার কথা না যদি সে জোর করে কারো থেকে পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করে কোন ভাবে ছাদে উঠেও থাকে তবে একটি সতর্ক বার্তা চলে যাবে হোটেল মালিকের কাছে। এছাড়াও যদি সে ছাদে উঠেও যায় তবে পানির ট্যাঙ্কে পড়ার কথা না কেননা ৪টি ট্যাঙ্কের উচ্চতা ছিল ১.২/২.৪ মিটার বা ৪/৮ ফুট। এছাড়া পানির ট্যাঙ্কের ঢাকনাগুলো কংক্রিটের তৈরি ভারী ঢাকনা। পুলিশ এই ঘটনার কোন নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা খুঁজে পায়নি। পুলিশ পরবর্তীতে এলিসা লামের দেহকে ময়না তদন্তের জন্য পাঠায়। তদন্তের পর এলিসা লামের পেটে কিছু মারবেল পাওয়া যায় এবং শরীরের কিছু জায়গায় মাংসের বিচ্ছেদ সুস্পস্ট ছিল। অর্থাৎ যেন কেউ তার শরীরের মাংস খুবলে খেয়েছে এমন। পানির ট্যাঙ্কে পড়ার কারণে তার শরীর ফুলে গিয়েছিল। এছাড়া তার শরীরে কোন শারীরিক নির্যাতন অথবা আত্মহত্যার মতো কোন কিছুর আলামত পাওয়া যায়নি। অবশেষে এলিসা লামের মৃত্যু একটি রহস্য হয়েই থেকে যায়। 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন