প্রাচীন পৃথিবীর ৭ম আশ্চর্য (গিজার মহা পিরামিডের ইতিহাস)


প্রাচীন পৃথিবীর ৭ম আশ্চর্য (গিজার মহা পিরামিডের ইতিহাস)


আসসালামু আলাইকুম!

মিশর একটি ঐতিহ্যের নাম যা বহন করে প্রাচীন সৌন্দর্য এবং হিংস্রতা। তারই অনেক কিছু রহস্য হয়ে আছে আমাদের কাছে যা জানা কিংবা অজানা। তেমনি একটি রহস্য হচ্ছে গিজার পিরামিড যা প্রাচীন একটি নিদর্শন। বিশ্বের মধ্যে ৭ম আশ্চর্যের একটি হল গিজার পিরামিড বা গিজার কবরস্থান। এক কথায় প্রাচীন রাজাদের সমাধিস্থল। এই পিরামিডটি কায়রো শহরের নীলনদকে ঘিরে অবস্থিত। সেখানে একত্রে মোট ৩টি পিরামিড রয়েছে। যার নকশা এবং কারু কাজের জন্য প্রায়ই পর্যটকদের মন কারে। 

খুফুর পিরামিডঃ খুফু ছিলেন সেই সময়ের প্রাচীন মিশরের একজন ফারাও। মিশরীয়রা রাজাদের ফারাও বলে থাকে। তিনি ৪র্থ রাজবংশের ২য় ফারাও ছিলেন। তিনি প্রায় ২৫৮৯ থেকে ২৫৬৬ খ্রিঃ অবধি তার শাসন কাজ চালিয়ে যান। মূলত তিনি এই পিরামিড বানিয়ে ছিলেন তাই নাম দেওয়া হয় তার নামেই। এই পিরামিডটি ছিল প্রথম পিরামিড এবং বাকি দুইটি পিরামিডের ন্যায় সবচেয়ে বড় পিরামিড। যার উচ্চতা প্রায় ১৪৮মিঃ। এই পিরামিডের সামনে একটি মূর্তি রয়েছে যার শরীর সিংহের মতো কিন্তু মাথা মানুষের। এই পিরামিডটি প্রথম পিরামিড যা পৃথিবীর ৭ম আশ্চর্যের একটি। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এই খুফুর পিরামিডের মধ্যে একটি বড় শুন্যস্থান খুঁজে পেয়েছেন। 


খাফরে পিরামিডঃ এই পিরামিডটি ২য় পিরামিড এবং খুফুর ন্যায় ছোট অর্থাৎ মাঝারি কিন্তু একে দেখতে বড় মনে হয় কারণ পিরামিডের নিচের দিকটি সমতল নয় কিছুটা উঁচু নিচু। এই পিরামিডের মধ্যে রয়েছে একটি হিমঘর ধারণা করা হয় এই হিম ঘরে প্রাচীন ফারাওদের মমি রাখা হতো। তার ঠিক পাশেই রয়েছে একটি মন্দির আর মন্দিরের পাশেই রয়েছে একটি কুয়া, সেই কুয়াতে অনেকগুলো খাফ্রের মূর্তি পাওয়া যায়।


মেনকাউরের পিরামিডঃ এই পিরামিডটি ৩য় এবং সবচেয়ে ছোট পিরামিড। মিশরের ৫ম তম রাজা মেনকাউরের নির্মাণ করা। তিনি মারা যাওয়ার পর তার কবর বা সমাধি সেই পিরামিডের সাথেই চুনা পাথর দ্বারা আবৃত করে দেওয়া হয় যাতে কোন ভাবে রাজার মমি চুরি বা কোন ক্ষতি না হয়।  কিন্তু বর্তমানে রাজা মেনকাউরের কবর থেকে চুনা পাথর ক্ষয় হয়ে তার কবর অনেকটিই বেরিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে।


পিরামিড তৈরির উদ্দেশ্যঃ প্রাচীন মিশরের মানুষরা বিশ্বাস করতো মৃত্যু মানেই শেষ নয় বরং নতুন জীবনের সূচনা। সেই জন্য তারা মৃত ব্যক্তিকে মমি বানিয়ে লুকিয়ে রেখে দিতো পিরামিডের নিচে যাতে মমির কোন ক্ষতি না হয় এবং নতুন জীবন পেলে যেন বেরিয়ে আসতে পারে। তখনকার ফারাওরাসহ তাদের প্রজাদের মনে এই বিশ্বাস গেঁথে গিয়েছিল যে তারা মারা গেলে তাদের আত্মা শরীর ত্যাগ করে না বরং ভেতরেই রয়ে যায়। যখন কেউ নতুন রাজা হতো তখন একজন নতুন রাজার প্রথম দায়িত্ব হতো সাবেক রাজা অর্থাৎ যারা ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদেরসহ প্রজাদের দেখাশোনা করা। এছাড়াও আরো একটি কারণ বা উদ্দেশ্য রয়েছিল এই পিরামিড তৈরির পিছনে। শুধুমাত্র মৃতদের মমি রাখতেই নয় বরং ভবিষ্যৎ চিন্তা করে খাবারের বিশাল ভান্দার, স্বর্ণ বা প্রিয় জিনিসগুলকে লুকিয়ে রাখার কাজেও ব্যবহার করা হতো পিরামিডগুলোকে। এভাবে খাবারসহ নানান প্রয়োজনীয় জিনিস গুদামজাত করতো কারণ তারা মনে করে মৃত্যুর পরবর্তী জীবন যেহেতু নতুন জীবনের সূচনা তাই এগুলো তাদের পরবর্তী জীবনের জন্য দরকার।


পিরামিডগুলো যেভাবে বানানো হতোঃ অধিকাংশ পিরামিডের মূল ভিত্তি হচ্ছে বিশাল আকারের পাথরের খণ্ডগুলোকে টেনে এনে একের পর এক রেখে সাজানো। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে এত বড় বড় পাথর খণ্ডগুলোকে কিভাবে তারা সরাতো বা সাজাতো?

উহু! এতো ভাবার কিছু নেই। পিরামিড নির্মাণকালীন সময়ে তাদের নির্মাণকারীরা এমন কোন বিশেষ প্রযুক্তি পায়নি এটা ঠিক তবে তারা বালির বদলে কোন একটি সমতল স্থান বেছে নিয়েছিলেন পাথরের ভিত্তি স্থাপনে। পাথর নিয়ে আসা হতো বড় বড় পাহাড় থেকে জাহাজের মাধ্যমে পরবর্তীতে সেই সমতল জায়গায় বিছিয়ে দেওয়া হতো পাথরগুলোকে। তারপর বড় বড় পাথরগুলোকে জোড়া দিয়ে আনুমানিক ভাবে একটার পর একটা পাথর বসিয়ে সাজানো হয়।

এখন আপনার মনে ২য় প্রশ্ন আসতে পারে যে পাথরগুলো এতো মসৃণ শেইপ পেল কি করে?

পাথরগুলো দূর-দুরান্ত থেকে আনা হতো রশি দিয়ে বেধে তাই স্বাভাবিক ভাবেই সব দিকে ঘুরে ফিরে ঘর্ষণ সৃষ্টি হতো তাই পাথরগুলো দেখলে মনে হবে যে কোন বড় পাথর কাটার মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু ঐ সময়ে প্রযুক্তি এতটা উন্নত ছিল না। পিরামিডের ভেতরের অংশ মসৃণ করতে তারা ভালো মানের চুনা পাথর ব্যবহার করতো যার যোগান দিতো পাশেই থাকা নীলনদ। গবেষকরা জানায়, পিরামিড নির্মাণ করতে প্রায় ৩০ বছর সময় লেগেছিল। তাই এই সবগুলো পিরামিডকে মহা পিরামিড বলা হয়। ধারণা করা হয়, এই পিরামিড বানানোর জন্য যে পাথর ব্যবহার করা হয়েছে তার একেকটির ওজন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ টন এবং এটি তৈরি করতে প্রায় ৪০০০,০০০ জন শ্রমিক লেগেছিল।


আইনি ব্যবস্থাঃ মিশরীয়দের আইনি ব্যবস্থা ছিল অনেক কঠিন। আইনিভাবে ন্যায় দিতেন ফারাও কেননা তিনিই প্রধান। ফারাওরা মূলত আইন তৈরি করতেন তাদের নির্দিষ্ট কোন আইন পাওয়া যায়নি। তারা মূলত কোনটা ভালো কোনটা মন্দ তার উপর ভিত্তি করে বিচার করতো এবং ন্যায় দিতো। 


মিশরীয়দের প্রধান খাদ্যঃ মিশরীয়দের প্রধান খাদ্য ছিল রুটি, গরুর মাংশ, মাছ। তারা মনে করতো এগুলো তাদের পেশিবহুল এবং শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।


আমরা প্রাচীন পৃথিবীর ৭ম আশ্চর্য নিয়ে একটি সিরিজ আকারে লিখার কথা ভাবছি! সেখানে প্রাচীন ৭ম আশ্চর্য নিয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। আশা করি সবাই মতামত দিয়ে সাথেই থাকবেন।

- ধন্যবাদ

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন