প্রাচীন পৃথিবীর ৬ষ্ঠ তম আশ্চর্য (ব্যাবিলনের উদ্যানের ইতিহাস)


প্রাচীন পৃথিবীর ৬ষ্ঠ তম আশ্চর্য (ব্যাবিলনের উদ্যানের ইতিহাস) 


 আসসালামু আলাইকুম! 

আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকে কথা বলবো প্রাচীন পৃথিবীর ৬ষ্ঠ তম আশ্চর্য নিয়ে। সরাসরি চোখে না দেখলেও প্রাচীন পৃথিবীর ৬ষ্ঠ তম আশ্চর্য ব্যাবিলনের উদ্যানের নাম আমরা সবাই জানি। এই স্থাপনাটি মূলত হেলেনিয় সভ্যতার সময়ে তৈরি করা হয়েছিল। প্রাচীন খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দের দিকে ইরাকের ইউফ্রেটিস নদীর তীর ঘেঁষে তৈরি হয়েছিল ব্যবিলনের উদ্যান। দ্বিতীয় সম্রাট নেবুচাদনেজার উদ্যানটি তৈরি করেন তার প্রিয় সম্রাজ্ঞীর জন্য। যার নাম ছিল "আমিতিস"। আমিতিসের মনরঞ্জনের কথা ভেবে সম্রাট ব্যাবিলনের উদ্যান তৈরি করেছিলেন। এই স্থাপনাটি স্থান পায় দ্বিতীয় সম্রাট নেবুচাদনেজারের ছাদে। 



নেবুচাদনেজার ছিলেন একজন শৌখিন মানুষ। তিনি প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন মিডিয়া দেশের এক মিডিয়ান সুন্দরী রমণীকে। মিডিয়া দেশটি ছিল পাহাড়-পর্বতের দেশ তাই তার সম্রাজ্ঞীর সেই সব দৃশের কথা মনে করে প্রায়ই মন খারাপ থাকতো। সম্রাট যখন এই বিষয়টি বুঝতে পারেন তখন তার সম্রাজ্ঞীর মন ভালো করতে এই ঝুলন্ত বাগানের কথা ভাবেন। সম্রাট তার সম্রাজ্ঞীকে বিষয়টি  জানান। তার প্রিয় সম্রাজ্ঞী আমিতিস খুশি হয় এবং এই কাজের জন্য সম্রাটকে অনুপ্ররনা দেয়। সম্রাট যেখানে থাকতেন সেই জায়গাটি ছিল সমতল ভূমির উপর তাই সম্রাট পরিকল্পনা করেন তিনি এই সমতল জায়গাতেই পাহাড়ের মতো ভিত্তি স্থাপন করবেন এবং বাগান করবেন। তারপর সম্রাট তার উপাসনালয়কে ঘিরে ভিত্তি স্থাপনের কাজ শুরু করেন। 


 - ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগান তৈরি হয় যেভাবে 

প্রথমে নির্মাণ করা হয় বিশাল এক ভিত, যার আয়তন ছিল প্রায় ৮০০ বর্গফুট। ভিত্তি স্থাপনের পর মাটি থেকে এর উচ্চতা দাড়ায় ৮০ ফুটের মতো। দিন রাত পরিশ্রম করেন প্রায় ৪০০০ হাজার শ্রমিক। বাগান দেখা শোনার কাজে নিয়োজিত ছিল প্রায় ১০৫০ জন মালী। প্রায় ৫-৬ হাজার রকমের উদ্ভিদ ও ফুলের চারা রোপণ করা হয়েছিল ঐ বাগানে। গাছগুলোতে প্রতিদিন পানি লাগতো প্রায় ৮২ হাজার গ্যালন। এই ফুলের চারাগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল সারা পৃথিবী ঘুরে ঘুরে। মালীরা সেই উদ্ভিদ ও ফুলের গাছ দিয়েই সাজিয়ে দিয়েছিলেন ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগানকে। সম্রাট নেবুচাদনেজার চেয়েছিলেন তার সম্রাজ্ঞীর খুশি দেখতে তাই পৃথিবীর নানান ধরনের উদ্ভিদ ও ফুল দিয়ে মেলা বসিয়ে ছিলেন। তার এই ঝুলন্ত বাগান ভালোবাসার এক প্রকৃত নিদর্শন যা যুগের পর যুগ ধরে পৃথিবীর বুকে আজও জীবিত। ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বাগান এবং পৃথিবীর ৬ষ্ঠ তম আশ্চর্যের মধ্যে একটি। 


 - টাওয়ার অফ বাবেল 

শুধু ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগানই না রয়েছে আরও একটি সুদীর্ঘ টাওয়ার। যার নাম টাওয়ার অফ বাবেল। প্রাচীন পুরানিক মতে জানা যায়, এই টাওয়ারটি তৈরি করেছিলেন সুমেরিয় সভ্যতার মানুষরা। তারা সর্গ ছুঁতে চেয়েছিলেন ঐ টাওয়ারের মাধ্যমে। 


 - ব্যাবিলনের পতন 

৫১৪ খ্রিস্টাব্দে পারস্য সম্রাট "সাইরাস" জেরুজালেম দখল করতে গিয়ে ব্যাবিলন শহরটি ধ্বংস করেন। সম্রাট নেবুচাদনেজারের উপাসনালয় এবং মন্দির পুড়িয়ে দেন। শেষ হয়ে যায় ব্যাবিলনের সৌন্দর্য, রুপ নেয় ধ্বংসস্তুপে। পরবর্তীতে ব্যাবিলনের সম্রাট হন "নেবোনিডাস" কিন্তু ব্যাবিলনের সৌন্দর্য ততদিনে শেষ। যা আর পরে ফিরিয়ে আনতে পারেননি নেবোনিডাস। তবে বর্তমানে জাতিসংঘ ও ইউনেস্কো এই বিশাল স্থাপনাটিকে পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। 


আপনার মূল্যবান মতামত দিয়ে আমাদের সাথেই থাকবেন। 

 - ধন্যবাদ 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন