সময়ের গল্প | The Story of Time (বিজ্ঞান)


সময়ের গল্প | The Story of Time


সময়! সময় আমাদের পুরো বিশ্বজগতের সকল কার্জক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। তার নির্দেশনায় জানা সম্ভব হয় যে কোন কাজ কখন শুরু বা কখন শেষ হবে। সময়কে কখন আটকানো সম্ভব নয়। সময় একটি নির্দিষ্ট দিকে অগ্রসর হতে থাকে। সময়ের গতিপথ কেউ না দেখতে পেলেও তাকে বোঝা যায়। আজকে এই সময় নিয়েই হবে এক বিষদ আলোচনা। আজকে আমরা জানবো সময় কী? সময়ের আবিষ্কার কিভাবে? সময়ের কিছু বৈশিষ্ট, সময়ের সাথে আলোর সম্পর্ক, সময়কে নিয়ন্ত্রণ করা যায় কি যায়না? এসব নানা ধরনের প্রশ্ন আজে সমাধান করার চেষ্টা করবো।

প্রথমত আমরা কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তারপর ধীরে ধীরে আমরা সময়ের মায়াজালে প্রবেশ করবো। 

আচ্ছা আপনি কখনো কি ভেবেছেন, যে সময় আসলে কী? কিভাবে এর সংজ্ঞা দেওয়া যায়?

সময় হলো এক ধরনের অনুক্রম যা অসীম, সে দৃশ্যমান নয় কিন্তু উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, সে বাধাহীনভাবে একটি নির্দিষ্ট দিকে একই হারে যেতে থাকে। মূলত একেই সময় বলে। আমরা যদি আরো নিখুঁত সংজ্ঞা চাই তবে সংজ্ঞাটি হবে এরকম -


Time is the continued sequence of existence and events that occur in apparently irreversible succession from the past, through the present, into the future. 

- Wikipedia


উপরের এই বাক্যে বলা হয়েছে, সময় হল অস্তিত্ব এবং ঘটনার ধারাবাহিক ক্রম যা অতীত থেকে বর্তমানের মধ্য দিয়ে, ভবিষ্যতের মধ্যে দৃশ্যত অপরিবর্তনীয় ধারাবাহিকভাবে ঘটে। যা থেকে বোঝা যায় যে সময় নিজ ইচ্ছায় ধারাবাহিকভাবে একটি নির্দিষ্ট দিকে যেতে থাকে, যাকে কেউ বাধা দিতে পারে না। অর্থাৎ সময়কে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব!


আপনি কি জানেন, কিভাবে সময় আবিষ্কার করা হয়?

১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কিছু কাল আগে থেকে 'সান ডায়াল' আবিষ্কারের মাধ্যমে সময়ের পরিমাপ শুরু হয়। তাঁরা সান ডায়াল অর্থাৎ সূর্যের দ্বারা সময় পরিমাপ করতো। যার জন্য তাদের দিনের আলোর বিশেষ প্রয়োজন ছিল। রাত হলে তখন তাঁরা সময় পরিমাপ করতে ব্যার্থ হত। তাঁদের এই পদ্ধতির সাথে বর্তমান যুগের সময় পরিমাপের কোনো মিল নেই।

সময়ের কথা আসলে, আর্কিমিডিসের কথা উঠে আসে। সেই প্রথম একটি 'গিয়ার ঘড়ি' তৈরি করেছিল। আমরা যদি বলি সময়ের যাত্রা শুরু কবে থেকে তাহলে আমাদের সামনে 'বিগ ব্যাং' এর ঘটনা উন্মোচিত হয়। সাধারণত বলা হয় সময়ের যাত্রা শুরু হয় আজ থেকে প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছর আগে। তাই বলা যায় যে সময়ের যাত্রা বিগ ব্যাং এর পর পরই শুরু হয়।


সময়ের কিছু বৈশিষ্ট -

১। একটি নির্দিষ্ট দিকে অগ্রসর হবে

২। কেউ বা কোনো বস্তু সময়ের গতিপথে বাধা সৃষ্টি করে সক্ষম হবে না।

৩। সময়ের যাত্রা অসীম

৪। সময় কখনো পিছনের দিকে বা অন্য কোনো দিকে অগ্রসর হবে না।

৫। সকল স্থানে সময়ের হার এক নাও হতে পারে। অর্থাৎ যদি পৃথিবীর কোনো স্থানে ১ ঘন্টা সময় অতিক্রম হলে মহাবিশ্বের সকল স্থানে যে ১ ঘন্টা সময় অতিক্রম হবে তা সঠিক নয়।


সময়ের সাথে আলোর সম্পর্ক

সময়ের সাথে আলোর সম্পর্কটা অনেক নিবিড়। প্রথম আলোর গতিবেগ নির্ণয়ের ধারণা শুরু হলে, তাঁরা সেকেন্ডের সাথে তাল মিলিয়ে আলোর গতিবেগ হিসেব করলে তুলনামূলক কম বেশি হত। পরে সিধান্ত নেওয়া হয় যে আলোকে সময়ের সাপেক্ষে সংজ্ঞায়িত না করে বরং সময়কেই আলোর সাপেক্ষে সংজ্ঞায়িত করা হোক। এতে দেখা গেলো পর্যাপ্ত ফলাফল পাওয়া যাচ্ছিল। এইভাবে সময়ের একটি নতুন হিসাব শুরু হয়। এখন সময়ের সাথে আলোর সম্পর্ক থাকার একটা মূল কারণ হতে পারে 'সময় যাত্রা' বা টাইম ট্রাভেল। 

বলা হয়েছে যে,

যদি কেউ আলোর গতিবেগ অর্জন করতে সক্ষম হয়, তাহলে তারপক্ষে সময়কে থামানো সম্ভব। অবশ্য তা শুধু নিজের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ কেউ আলোর গতিপ্রাপ্ত হলে তার জন্য সময় স্থির হয়ে যাবে। এখন এটা কিভাবে স্থির হবে বা কেমনভাবে স্থির হবে তা জানার জন্য উদাহরণ দেখি-

মনে করুন, আপনি ২০২০ সালে পৃথিবীতে কোনো এক স্থানে অবস্থান করছেন যেখানে একটা বড় আম গাছ আছে এবং গাছটিতে আম এ ভরা। আপনাকে আলোর গতি দেওয়া হলো। আপনি এখন যদি মাত্র ১০ মিনিটের জন্য কোথাও সেই গতি নিয়ে যান। আপনি দেখবেন সবকিছু স্থির হয়ে গেছে। আরেকটা মজার বিষয় হলো আপনি যখন ১০ মিনিট পর আবার যেখানে ছিলেন সেই স্থানে উপস্থিত হন তাহলে আপনি দেখবেন যে সেখানে কোনো গাছ নেই বা গাছটিতে একটাও আম নেই। তখন আপনি কারো কাছ থেকে জানলেন যে এখন ২০৬৮ সাল। এইটা শোনার পর আপানার মনে হতেই পারে যে আমি আপনাকে কোনো সাইন্স ফিকশনের গল্প শোনাচ্ছি। কিন্তু না! আমি মোটেও এমনটা করছি না। এই ঘটনা দ্বারা বোঝা গেল যে আপনার জন্য সময় স্থির থাকলেও এই বিশ্বজগতের জন্য সময় স্থির নয়। তারপর আপনি লক্ষ্য করলেন আপনার বয়স যেমন ছিল তেমনই আছে। কারণ আপনার জন্য সময় স্থির ছিল। 

আবার, ধরুন আপনি আলোর চেয়ে বেশি গতিপ্রাপ্ত হলেন। তখন কি হবে? তখন আপনার জন্য সময় সম্পূর্ণ রিভার্সে চলবে। অর্থাৎ আপনি অতীতে যাচ্ছেন। 

যাই হোক এগুলো আসলে এক একজন গবেষকদের ধারণা মাত্র। গাণিতিকভাবে অনেক কিছুই প্রমাণ করেছে তাঁরা এবং এখনো করছে। এগুলো যতদিন সত্য হিসেবে সামনে না আসছে ততদিন এটা হাইপোথেসিস ছাড়া কিছু বলা যাবে না।


আজকে সময় ও আলো সম্পর্কে কিছু বিশেষ তথ্য জানলাম আমরা। আসলে সময় আর আলো এমন একটা বিষয় যা নিয়ে প্রতিদিন হয়তো অজানা নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কার করার চেষ্টায় আছে বিজ্ঞানীরা। এই বিষয়ে বিস্তারিত বলতে গেলে হয়তো আমি মারা যাবো। তাই, যতটুকু মানুষ জানতে পেরেছে, তার কিছু অংশ এখানে দেখানো হয়েছে। 


#DoYouKnow : Time is an illusion - Carlo Rovelli

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন